আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক কে হতে পারেন ?
প্রাচীন দল হিসেবে আওয়ামীলীগের সুনাম যেমন আছে,তেমনি ক্ষমতায় দীর্ঘদিন থাকারও ইতিহাস গড়েছে এই দলটি । আগামী কাউন্সিলে অনেকেই দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ ‘সাধারণ সম্পাদকের’ দায়িত্ব পেতে তৎপরতা শুরু করেছেন বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা। তারা যেমন নিজেদের সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়িয়েছেন, তেমনি নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ মজবুত করতে উদ্যোগী হয়েছেন। আগামী ডিসেম্বরে কেন্দ্রের সম্মেলন উপলক্ষে দেশব্যাপী তৃণমূলের সম্মেলন গুছিয়ে আনছে দলটি। ইতোমধ্যে বেশ কিছু জেলার সম্মেলন শেষ হয়েছে এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটিও হয়েছে। ইউনিয়ন, পৌরসভা-উপজেলা পর্যায়ে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও সম্মেলন হচ্ছে। সম্মেলন ঘিরে যেমন দেশব্যাপী বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে, তেমনি ভেতরে ভেতরে বাড়ছে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে প্রতিযোগিতা। কে হচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক– এ প্রশ্নের উত্তর পেতে চায়ের টেবিলে ঝড় তুলছেন নেতা-কর্মীরা।
আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের টানা দুইবার এ দায়িত্বে। তিনি আগামী সম্মেলনে এ পদে প্রার্থী হবেন না এমন আলোচনা রয়েছে দলটিতে। তা ছাড়া তার শারীরিক অবস্থাও খুব ভালো নেই। তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে যাদের নাম আলোচনায় আছে তারা হলেন- সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, কাজী জাফর উল্লাহ ও ড. আব্দুর রাজ্জাক এবং চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, ড. হাছান মাহ্মুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। `
এ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য সবচেয়ে আলোচিত নাম জাহাঙ্গীর কবির নানক। দল ও সরকারকে আলাদা করার যে কৌশল, তাতে তিনি এগিয়ে আছেন। কেননা নানক মন্ত্রী নন, সংসদ সদস্যও নন। গত নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন না পেলেও তাকেসহ আরও কয়েকজনকে নিয়ে দলের নির্বাচন পরিচালনা করা হয়। পরে ছাত্রলীগ দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে। নানক তৃণমূল থেকে উঠে এসেছেন, ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে ছিলেন, যুবলীগেরও নেতৃত্ব দিয়েছেন। সংগঠক হিসেবে দলে তার পরিচিতি আছে বলে সাধারণ সম্পাদকের দৌড়ে অনেকে তাকেই এগিয়ে রাখছেন।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী মৈত্রী সংলাপে জাহাঙ্গীর কবির নানকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ভারতে পাঠানো হয়। অনেক সিনিয়র নেতা থাকতে এ রকম গুরুত্বপূর্ণ একটি মিশনে নানকের নেতৃত্বে টিম যাওয়াকে তার প্রতি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিশেষ ‘সুনজর’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গত ১৫ মার্চ গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ১৪ দলের বৈঠকেও একমাত্র আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীর কবির নানক।
ড. আব্দুর রাজ্জাককেও ওই পদের সম্ভাব্য হিসেবে গণ্য করছেন অনেকে। তিনি দলের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য এবং সরকারে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে তার পরিচিতি আছে। গত দুই সম্মেলনে দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র এবং গত নির্বাচনে ইশতেহার প্রণয়নের কাজ করে তিনি দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। গত সম্মেলনেও সাধারণ সম্পাদক পদের দাবিদার ছিলেন তিনি। কিন্তু দলের তৃণমূলের সঙ্গে তার যোগাযোগ খুব একটা নেই বলে সমালোচনা করা হয় তার। তবে দলের অভ্যন্তরীণ, জাতীয় এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
সাধারণ সম্পাদক পদে মাহবুবউল আলম হানিফের নাম খুব জোরেশোরেই আলোচনায় আছে। দীর্ঘদিন তিনি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে রাজনৈতিক পরিপক্বতা দেখিয়েছেন। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখেন। গত কয়েক বছরে তিনি অনেক ইস্যুতে তার সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। জাতীয়ভাবেও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তার। দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় তিনি। এটা যেমন তার জন্য ইতিবাচক, আবার সাধারণ সম্পাদক প্রার্থিতায় নেতিবাচক। কেননা মনে করা হয়, আত্মীয় কাউকে আপাতত দলের সাধারণ সম্পাদক পদে চান না সভাপতি। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে মাহবুবউল আলম হানিফকে দায়িত্ব দেয়া হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে ড. হাছান মাহ্মুদের সম্ভাবনাও কম নয়। তিনি দলের অন্যতম মুখপাত্র। দলে তার উত্থান হয়েছে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এবং সাংগঠনিক বিষয়ে তিনি এখন ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন। দক্ষতার সঙ্গে তথ্য মন্ত্রণালয় সামলাচ্ছেন। সমানতালে সময় দিচ্ছেন দলেও। এসব কারণে তার সম্ভাবনাকে অনেকেই এগিয়ে রাখতে চান।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এখন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তেমন প্রভাবশালী না হলেও শেখ হাসিনার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। তা ছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে মহিলা কাউকে বিবেচনা করা হলে তার প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নেই।
যুগ্ম সম্পাদক পদে অপেক্ষাকৃত তরুণ বাহাউদ্দিন নাছিম কর্মীদের অত্যন্ত পছন্দের একটি নাম। কর্মীবান্ধব হিসেবে তার পরিচিতি আছে।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে গত সম্মেলনে সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও সোহেল তাজের নাম আলোচনায় ছিল। এবার ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, মির্জা আজমসহ কয়েকজনের নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে নেতারা অনেকে বলছেন, শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক কে হবেন, তা নির্ভর করবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কী ভাবছেন তার ওপর।